জেব্রা ফিঞ্চ পাখি-Zebra finch

Post by

ভিউয়ারস আজকে আমরা জেব্রা ফিঞ্চ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং যতটা সম্ভব এই পাখি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো তাই জেব্রা ফিঞ্ছ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো ব্লগটি পড়ুনঃ  

১। ফিঞ্চ পাখির দৈহিক গঠন :

জেব্রা ফিঞ্চ হচ্ছে আসলে অস্ট্রেলিয়ান পাখির একটি জাত। এই পাখিটি লেজসহ লম্বায় ৩.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি এবং পাখির ওজন ১২-১৬ গ্রাম। জেব্রা ফিঞ্ছ পাখির ঠোঁট এবং পা টুকটুকে লাল বা কমলা রং এর হয়। পাখির চোখের নিচে দিয়ে একটি ছোট কালো দাগ চলে গেছে একেবারে পাখির কান বরাবর। আর প্রজাতি ভেদে এই পাখির বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে।

২। ফিঞ্চ পাখির মিউটেশন বা জাত :

জেব্রা ফিঞ্চের বেশ কিছু মিউটেসন আছে। এদের মধ্যে গ্রে, ফন, হোয়াইট, সোনো-হোয়াইট, পাইড, ক্রেস্টেড, ব্লাক চিক (BC), চেস্টনাট ফ্লাঙ্কড হোয়াইট (CFW), পেঙ্গুইন, ইজাবেল/ফ্লোরিডা ফেন্সি, সিলভার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মিউটেশন। আমরা সচরাচর যেই মিউটেশনের পাখি দেখে থাকি সেটা হলো গ্রে বা এ্যাশ কালারের, যাকে নরমাল জেব্রা ফিঞ্ছও বলা হয়।

৩। ফিঞ্চ পাখির আচার-আচরণ :

প্রকৃতিতে জেব্রা ফিঞ্চ পাখি কলোনী পদ্ধতিতে বসবাস করে। এই পাখি দলবেঁধে প্রতিদিন ২ থেকে ৪ বার খাবারের সন্ধানে বের হয়। ঘাসযুক্ত ভূমিতে বিচরণ করতে এরা বেশি ভালোবাসে। যার যার ঘরের আশেপাশেই বেশি সময় কাটায় এই পাখিরা।

(লংটেইল, গোল্ডিয়ান সহ অন্যান্য ফিঞ্চদের সাথেও বেশ সুসম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়) এই পাখি খাঁচায় কেমন আচরণ করে তা আমরা সকলেই জানি ! এক জায়গায় স্থির হয়ে বসার সময় এই পাখিদের নেই। যার জন্য এই পাখিদের খুব দ্রুত ক্ষুদা লেগে যায় তাই বারবার এই পাখিদের খাবার ও পানি খেতে দেখা যায়।

এই পাখিরা গোসল করতে খুবই পছন্দ করে, তাই এদেরকে নিয়মিত গোসলের পানি দেওয়া জরুরী।

৪। ফিঞ্চ পাখির খাঁচার সাইজ :

সাইজে ছোট বলে আমরা মনে করি ফিঞ্চকে কোনরকম একটা খাঁচা দিলেই হবে না এটা মোটেও ঠিক না। কারণ তারা যে প্রচন্ড ওড়া-উড়ি, ছোটাছুটি করে সেটা মাথায় রাখতে হবে। ব্রিডিং এর সময় ১ জোড়া পাখির জন্য ১৮”১৮”১৮ সাইজের খাঁচা সর্বোত্তম। জায়গার সমস্যা থাকলে ১২”১৮”১৮ বা ১৮”১২”১৮ করে দিতে পারেন। ব্রিডিং ছাড়া অন্য সময় ১৮”২৪”২৪ বা ২৪”১৮”২৪ এমন সাইজের খাঁচায় একসাথে ৩-৪ জোড়া রাখা সম্ভব। ইচ্ছা করলে এমন ভাবেই কলোনীতে পাখিকে ব্রিড করাতে পারেন।

৫। ফিঞ্চ পাখির খাবার-দাবার :

এই পাখির সবচেয়ে প্রিয় খাবার হোল সিড মিক্স আর এই “সিড মিক্স’ বানাতে যেসকল আইটেম প্রয়োজন হয় তাহলোঃ 🔹 হোয়াইট মিলেট, 🔹 কাউন, এটাও এক ধরণের মিলেট। 🔹 হোয়াইট চীনা, 🔹 তিশি, 🔹গুজিতিল, 🔹ক্যানারি, 🔹 পোলাও ধান ইত্যাদি দেওয়া যায়।

আর সবুজ শাকসবজির মধ্যে যা দিতে পারেন তাহলোঃ 🌿পালং শাক, 🌿সরিষা শাক, 🌿কলমি শাক, 🌿 লাল শাক 🌿পুদিনা শাক 🌿ধনেপাতা, 🌿 তুলসি 🌿 লেটুস পাতা, নিমপাতা ও 🌿 সজনে পাতা 🌿 থানকুনি পাতা আর সবজির মধ্যে গাজর ইত্যাদি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার দেওয়া উচিৎ।

ক্যালসিয়ামের জন্য সর্বদা খাঁচায় কাটেল ফিস বোন বা সমুদ্রের ফেনা রাখতে হবে, ডিমের খোসা ধুয়ে শুকিয়ে গুড়া করেও দেওয়া যায় আস্ত রেখে দিলেও হয়।

আর প্রোটিনের জন্য এগফুড বা মেলওয়ার্ম অথবা পিপড়ার ডিম দেওয়া যায়। এছাড়া সপ্তাহে ২-৩ বার এসিভি, তুলসি দ্রবণ খাওয়ালে পাখি সুস্থ থাকবে এবং অসুখ-বিসুখও অনেকটা কমে যাবে।

৬। ফিঞ্চ পাখির এগফুড:

মুরগীর ডিম /কোয়েলের ডিম অবস্যই হার্ড বয়েল করা লাগবে। কখোনো চিড়ার সাথে আবার কখোনো ছোলা ছাড়ানো কাওন রাত্রে ভিজিয়ে রাখা বা কাওনের ভাত আধা সিদ্ধ মিসিয়ে আরো বেস কিছু আইটেম যেমন চিংড়ি মাছের মিহি গুড়া, বিটেল পোকার গুড়া কমার্শিয়াল এগফুড ভালো কোম্পানির, সজনে পাতার গুড়া খুব কম পরিমানে,ওটস দিতে পারেন, এর পর শাক সবজি কুচি করা যেমন: গাজর/বরবটি/ব্রকলি/লাল শাক/ধনে পাতা/তুলসী/লেটুস ও পুদিনা ইত্যাদি মিক্স করে দিতে পারেন।

৭। ফিঞ্চ পাখির অসুখ-বিসুখ :

আমাদের দেশে ফিঞ্চ পাখির যেই সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি হয় তাহলো ঠান্ডা লাগা এবং এটা এই ধরণের ঠান্ডা-গরম আবহাওয়াতেই সবচেয়ে বেশি ঘটে। তুলসির দ্রবণ বা এসিভি অথবা খাটি মধু খাওয়ালে এবং পাখিকে নিয়মিত রোদ পোহালেই পাখি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এগুলো পাখিকে আগে থেকেই নিয়মিত খাওয়াতে হবে আর পাশাপাশি পাখিকে সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ বার রোদে রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে দিনের এবং রাতের সময় পাখির খাঁচার তাপমাত্রা ঠিক বা উপযুক্ত রাখার, সেটা ফ্যান চালিয়েই হোক অথবা ১০০ ওয়াটের বাল্ব জ্বালিয়েই হোক।

ভিউয়ারস আপনারা যদি অন্যান্য পাখির সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাহলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি ঘুরে আসতে পারেনঃ

Leave a comment