টিয়া পাখির পালন পদ্ধতি
আমাদের মধ্যে অনেকেই শখের বসতে নানান ধরণের পাখি পুষে থাকে। এদের মধ্যে আজকাল মানুষ যে পাখিটিকে বেশি পালন করা শুরু করেছে তা হোল টিয়া পাখি। এই প্রজাতির পাখিরা সত্যই এখন খুব পরিচিত এবং জনপ্রিয় পাখি।
সবুজ টিয়া সাবলীলভাবে পোষা প্রাণী হিসাবে ধরা যায় এবং এটি কথা শিখার পর মানুষের মতো কথা বলতে পারে। এরা সাধারণত বনজঙ্গল, জলাশয় অঞ্চল, বিস্তীর্ণ লোকালয়, পাতা ঝরাবন, বৃক্ষবহুল এলাকা, পাহাড়ী এলাকা, চা-বাগান, চাষের জমি, পুরানো বাড়ি ইত্যাদি এলাকায় বেশি বসবাস করে। টিয়া পাখি পালন করে সফল হওয়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যা অসংখ্য।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করে আমাদের সাথেই থাকুনঃ যাচ্ছেতাই
টিয়া পাখির খাঁচার মাপঃ
আজকাল টিয়া পাখি (Parrot) পালার প্রবণতা এতটা বেরে গিয়েছে যে মানুষ এখন নিজের ঘরে অল্প জায়গার মধ্যে এই পাখিটি পালা শুরু করেছে। যেহেতু টিয়া পাখির খাঁচা খুব একটা বেশি জায়গা দখল করে না।
তাই মানুষ এই পাখিকে বিভিন্ন জায়গায় পালন করা শুরু করেছে। কেউ কেউ খাঁচা বারান্দায় রাখে আবার কেউ কেউ রুমে খাঁচা রেখে এই পাখি পালন করে। এই টিয়া পাখির খাঁচার মাপ হচ্ছে ৪/৪/৪ ফিট। এই খাঁচার মাপ বেশি দিতে পারলে আরও ভালো হয়।
টিয়া পাখির খাবার তালিকাঃ (Parrot food)
এই পাখিটি মানুষের মত কথা বলতে পারলেও এই পাখিটি মানুষের মত সব ধরণের খাবার গ্রহন করেতে পারেনা। অন্যান্য পাখির মত এই পাখিরও নির্দিষ্ট কিছু খাবার রয়েছে যার তালিকা নিন্মে দেয়া হল আর এই তালিকার মধ্যে আমরা টিয়া পাখির সব ভালো খাবার (Best Parrot Food) এর নাম উল্লেখ করছিঃ
১/সিড মিক্স (Seed mix)
২/ধান
৩/সূর্যমুখীর বীজ (Sunflower seeds)
৪/কুসুম বীজি
৫/চিনা বা কাউন (China)
৬/মিলেট মিক্স সিড
৭/ হেম্পসীড
৮/ ক্যানারি
৯/ কালো জিরা
টিয়া পাখির নরম খাবারের (Soft Food) তালিকাঃ
টিয়া পাখির প্রাথমিক খাবারের (Parrot Food) বাইরে যে সকল খাবার পাখিকে একটু বেশি ভিটামিন যেমন কেলসিয়াম, পটাসিয়াম, মিনারেল, প্রটিন ইত্যাদি দিতে পারে তাদেরকে আমরা নরম খাবার এর মধ্যে রেখেছি। এই নরম খাবার বা Soft Food এর তালিকায় যে সকল খাদ্য পরেছে তাহোল
১/ কলমি শাক /আলু শাক /পালং শাক /লাল শাক ইত্যাদি খাবার পাখির শরীরে অনেক বেশি পরিমানে ক্যালসিয়াম এর যোগান দেয়। তাই এই শাঁক গুলো পাখিকে সপ্তাহে ১দিন করে দিতে পারেন। এই শাঁক গুলো পাখির শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে তাই গ্রীষ্মকালীন সময়ে পাখিকে বেশি বেশি শাঁক খাওাতে হবে।
২/ বিভিন্ন সবজি যেমন গাজর, মিস্টি কুমড়া, পেঁপে, বরবটি, শশা, কপি, করল্লা,কাঁচা মরিচ একসাথে মিশিয়ে সিদ্ধ করে সপ্তাহে ১দিন আর কাঁচা সপ্তাহে ১দিন দিবেন। যার ফলে পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বারবে আর পাখির শরীরও ঠাণ্ডা থাকবে। পাখির শরীরে মেদ বা চর্বি কম হবে। সবুজ শাঁক সবজি সকল ধরণের পাখির শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এই সবজি গুলোর মধ্যে সবুজ কাঁচা মরিচ টিয়া পাখির সবচেয়ে বেশি পছন্দের খাবার। এরা এই কাঁচা মরিচকে আস্তা খেতে পছন্দ করে।
৩/ গম, ছোলা, ডাবলি, সবুজ মুগ ডাল ভিজিয়ে নরম করে টিয়া পাখিকে সপ্তাহে ২দিন করে দিতে হবে।
৪/ বিভিন্ন ডাল জাতীয় খাবার অথবা মিক্সসিড যেমন্ মুগ ডাল, বুটের ডাল ,মশুর ডাল সিদ্ধ করে ১৫দিন পর পর ১দিন অথবা ১ বার করে দিতে হবে। এবং সিদ্ধ ভুট্টা ১৫দিনে ২দিন করে দেওয়া যাবে, আর আস্তা ভুট্টা টিয়া পাখিদের প্রিয় খাবার।
৫/ নিম পাতা, সজনে পাতা, এলভেরা, তুলসী পাতা, থানকুনি পাতা, ধনে পাতা, লেটুস পাতা এইগুলো মাঝে মাঝে পাখিকে দিতে হবে। নিম পাতা, সাজনে পাতা, তুলসী পাতা এইগুলো পাখির নানান ধরণের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৬/ গরম পড়লে ডাবের পানি, লেবুর পানি, গ্লুকোজের পানি বা সেলাইন যেকোনো একটা পানিয় পাখিকে দিতে হবে। ফল বা ফলের ব্লেন্ড করে পাখিকে জুস হিসাবে দিতে পারেন। এইগুলো পাখি অনেক মজা করে খায়। আরও চাইলে এক কাপ পানিতে এক চিমটি পরিমাণ টক দই মিশিয়ে মাসে তিনদিন করে পাখিকে দিতে পারেন।
টিয়া পাখির যত্নঃ
টিয়া পাখিকে সপ্তাহে একদিন টীমসেন ঔষধ ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রাতে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে পাখির খাঁচাকে ঢেকে রাখতে হবে আর সামান্য ফাঁকা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি আর অতিরিক্ত রোদ থেকে পাখিকে সরিয়ে রাখতে হবে। পাখিকে খোলা মেলা আলো বাতাস পূর্ণ জায়গায় রাখতে হবে। সপ্তাহে একদিন করে পাখির খাঁচার ট্রে পরিষ্কার করতে হবে।
ইঁদুর, বিড়াল, কাক, মশা, ফ্যান ইত্যাদি থেকে পাখিকে দূরে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে ফ্যান বন্ধ করে দরজা জানালা লাগিয়ে পাখিকে বদ্ধ রুমে ছেড়ে দিবেন যার ফলে পাখি উড়া উড়ি করতে পারবে। আর উড়া উড়ি করলে পাখির সাস্থ্য ভালো থাকবে।
গরমে সপ্তাহে তিনদিন একটি বড় বাটিতে পাখির গোসলের পানি দিতে হবে। আর শীতে একদিন দিলেই হবে। আর পানি সকাল ১০/১১টার দিকে দিয়ে ১/২টার দিকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এই পানিতে নিমপাতা, এলভেরা বা পেয়ারা পাতা দিলে পাখির পালক সুন্দর থাকবে।
টিয়া পাখির দাম কতঃ (Parrot price in Bangladesh)
স্থান ভেদে আর মিউটেশন ভেদে এই পাখির দাম বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেহেতু টিয়া পাখির আয়ুকাল বা আয়ুসীমা অনেক বেশি তাই এদের পালার মত লোকের কোন অভাব নেই (টিয়া পাখির গর আয়ু বা Parrot Iifespan ৯৫ বছর)। আর এই পাখির কালার কম্বিনেশনের জন্য দিন দিন এই পাখির চাহিদা ও দাম বেড়েই যাচ্ছে।